19 Feb 2025, 01:00 pm

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর হুমকির মুখে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অস্তিত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত সবচেয়ে গুরুতর অপরাধগুলোর বিচার করার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)’র ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

দ্য হেগ থেকে এএফপি জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল, কোনোটিই আইসিসির ১২৫ সদস্য রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত না হলেও নিষেধাজ্ঞাগুলো আদালতের কার্যক্রমকে বড় ধরনের সংকটে ফেলতে পারে।

নিষেধাজ্ঞার ফলে আইসিসির কর্মকর্তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষিদ্ধ হয়ে পড়বে, যা তাদের কাজকে জটিল করে তুলবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মার্কিন প্রতিক্রিয়ার ভয়ে আদালতের সঙ্গে লেনদেন করতে অনিচ্ছুক হতে পারে।

এতে আদালতের প্রযুক্তিগত ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সংক্রান্ত কার্যক্রম, এমনকি প্রমাণ সংগ্রহের প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। অভিযোগ অনুযায়ী নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিরা সামনে আসতেও দ্বিধা করতে পারেন।

টিএমসি আসের ইনস্টিটিউট ও আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেমস প্যাট্রিক সেক্সটন বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা হয়তো আইসিসির সঙ্গে সম্পর্ক রাখাই বন্ধ করে দেবে, কেননা এটি তাদের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।’

সেক্সটন আরও বলেন, ‘মাইক্রোসফটের মতো বড় সরবরাহকারীরা আগেভাগেই নিজেদের গুটিয়ে নিতে পারে।’ তিনি নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক অপরাধবিচারের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করছেন।

যুদ্ধ,  হলোকাস্ট ও গণহত্যা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনআইওডির থাইজ বউফনেখত বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা আইসিসির জন্য ‘অভ্যন্তরীণ সংকট’ সৃষ্টি করেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, আইসিসির বর্তমান প্রধান কৌঁসুলি করিম খান তার শীর্ষ টিমে কয়েকজন মার্কিন নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করেছেন—‘এখন তারা একসঙ্গে কাজ করতে পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং জটিলতার আশঙ্কায় কিছু কর্মীদের আগেভাগে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বউফনেখত এএফপিকে বলেন, ‘আইসিসি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, ফলে এর কার্যক্রমে প্রচুর আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং জড়িত।’

আদালত কী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে?

বউফনেখত বলেন, ‘একেবারেই কিছু করতে পারবে না।’

‘নৈতিক যুক্তি দাঁড় করানো যেতে পারে যে এটি আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে যায়। কিন্তু এটি কেবল মার্কিন মিত্রদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যারা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় সতর্ক থাকে।’

সেক্সটন বলেন, আদালত সম্ভবত কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে আইসিসি ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে।

আইসিসির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আদালতের কোনো কর্মকর্তা বা সদস্যের ওপর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে বা তাদের কাজে বাধা দেওয়া হলে আদালত আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে।

আইনগতভাবে এর অর্থ হলো আইসিসি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এটি সম্ভব হলেও, সেক্সটন বলেন, ‘এতে পরিস্থিতির উত্তাপ কমবে না, বরং আরও বেড়ে যেতে পারে।’

এর পরিণতি কী হতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও আগ্রাসনের অপরাধ তদন্তকারী আইসিসিকে দুর্বল করা হলে বিশ্বব্যাপী একনায়কদের অবাধ ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর উদ্দেশ্য হলো, যে ন্যায়বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পরিশ্রম করেছে, তা দুর্বল ও ধ্বংস করা।’

‘এটি এমন এক বৈশ্বিক নিয়মকে আঘাত করছে, যা সবার জন্য প্রযোজ্য এবং সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চায়।’

যদি নিষেধাজ্ঞাগুলো, যেমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে, কৌঁসুলিকে লক্ষ্য করেই দেওয়া হয়, তাহলে আফগানিস্তান, ইউক্রেন ও সুদানের মতো সংকটপূর্ণ অঞ্চলে চলমান অপরাধ তদন্তেও প্রভাব পড়বে।

সেক্সটন এএফপিকে বলেন, ‘এর ফলে এমনকি সেইসব মামলারও বিচার বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যেগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি নেই।’

‘এটি শুধু ফিলিস্তিন পরিস্থিতির তদন্ত নয়, সব তদন্তকেই দুর্বল করবে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো এমন এক সময় এসেছে, যখন আইসিসি এরই মধ্যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

দ্য হেগে সন্দেহভাজন এক লিবিয়ান যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেপ্তারের পর ‘ভুলভাবে লেখা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা’ পাওয়ার অভিযোগ তুলে ইতালি তাকে মুক্তি দিয়েছে, যা আদালতকে বিব্রত করেছে।

এছাড়া ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে কিছু দেশ দ্বিধা প্রকাশ করেছে, যা আদালতের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

সেক্সটন বলেন, ‘আমি মনে করি এটি আইসিসির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। এটি আদালতের জন্য একটি সত্যিকারের সংকটময় মুহূর্ত।’

এর আগে কি এমন ঘটনা ঘটেছে?

হ্যাঁ, ২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আইসিসির তৎকালীন কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এর কারণ হলো, আদালত তখন আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করছিল।

সেই সময় পম্পেও আইসিসিকে ‘একটি প্রহসনের আদালত’ বলে অভিহিত করেন।

পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বছর পর এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন এবং ওয়াশিংটন আইসিসির প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে ‘আলাপ-আলোচনার’ প্রতিশ্রুতি দেয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, যাতে এমনকি নেদারল্যান্ডসে সামরিক অভিযান চালানোর মতো চরম পদক্ষেপও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

২০০২ সালে মার্কিন কংগ্রেস তথাকথিত ‘হেগ আক্রমণ আইন’ পাস করেছিল, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আইসিসির হেফাজতে থাকা মার্কিন নাগরিকদের মুক্ত করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 1758
  • Total Visits: 1601103
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1702

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বুধবার, ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ৭ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
  • ১৯শে শা'বান, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ১:০০

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
     12
17181920212223
2425262728  
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018